লেখকঃ ইঞ্জিঃ মোঃ সিরাজুল ইসলাম

“যক্ষ” যুধিষ্ঠির কে জিজ্ঞেস করেছিলো, বিশ্বে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় কি? যুধিষ্ঠির উত্তরে বলেছিলেন, “মানুষ জানে সে মরে যাবে তবু সে অর্থসম্পদ জমা করে, ডালপালা বিস্তার করে, নাম যশ খ্যাতি চায়, অন্যায় অবিচারে লিপ্ত হয় যেন সে অমর!”

প্রিয় পাঠক, ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ বাঙালির রক্তের বন্যায় ভেসে চার লক্ষ মাবোনের ইজ্জত নিলামে তুলে ১ লক্ষ জারজ শিশু বিদেশে দত্তক হয়ে বাংলাদেশ নামক “ব” দ্বীপ টা স্বাধীন হয়েছিলো! তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকির মুখে সারা বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ করে মাত্র ৯ মাসে লুঙ্গি পরা মাজায় গামছা বাঁধা দামাল ছাত্র কৃষক শ্রমিক কুলি মজুর ধোপা নাপিত জেলে মুচি কাঁধে কাধ মিলেয়ে এনেছিলো যে স্বাধীনতা তার মুল নায়ক ছিলেন
“মুজিব” নামের এক পান্তা ভাত খাওয়া সাহসী নেতা! He was highly talent warrior !

১৯৭৫ সালে প্রথম আঘাত এলে স্বাধীনার মূলস্তম্ভ পরিবর্তন হয়ে উল্টো ১৮০° ঘুরে যায় জনগনের আশা-আকাঙ্ক্ষা! দীর্ঘ সামরিক শাসনের পর ১৯৯০ সালে গনতান্ত্রিক সরকার এলে ও সবাই ক্ষমতা ছাড়ার সময় পুনঃ ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত করতে গনতন্ত্র খর্ব হতে থাকে! বিরোধী দলের ব্যর্থতায় একটা দল দীর্ঘ ১৫ বছর দেশ শাসন করার সুযোগ পেয়ে বেশ জবাবদিহিতা থেকে সরে আসে! তবুও দেশটার উন্নয়ন এমন পর্যায় ছিলো দরিদ্র দেশটা উন্নয়নশীল দেশ তথা উন্নত দেশের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পৌঁছে গিয়েছিলো!

১৯৭১ সালের পরাজিত দেশ সরকার উৎখাতে তৎপর ছিলো স্বাধীনতা সাল থেকে! সরকার উৎখাতে দেশি-বিদেশি পূঁজি বিনিয়োগ, ষড়যন্ত্র, মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা, ও সরকারের অপরিনামদর্শী নির্বুদ্ধিতার কারনে ৫ ই আগষ্ট ২০২৪ সরকারের পতন ঘটে!

স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৩/৫৪ বছরের ভিতর এমন একজন ব্যক্তি সরকারের শীর্ষ পদে আসেন যিনি বয়োজ্যেষ্ঠ আশাতিপর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন উচ্চ শিক্ষিত নোবেলজয়ী যার চাওয়া-পাওয়ার কিছুই থাকার কথা না! বাংলাদেশের মানুষ ভেবেছিলো, তিনি হবেন নিরপেক্ষ, নির্লোভী, অর্থবিত্তের আকাঙ্খাহীন, আইনের শাসক ন্যায় বিচারক! থাকবে না স্বজনপ্রীতি, সুরের ঝংকার তুলবেন সাম্যের গীতির! তিরিশ লক্ষ শহীদ তার জন্য দোয়া করে আয়ু বৃদ্ধি করে দিবে আরও শতবছর!

পাঠক, যুধিষ্ঠির বাক্য তিনি শিরোধার্য করে অবাক করে দিলেন সারা বিশ্বকে! তিনি বাংলাদেশের আদি ইতিহাস মুছে দিলেন, সন্ত্রাসীদের মুক্তি দিলেন, নিজের ১. যত মামলা ছিলো আদালত প্রসেসিং ছাড়া নির্বাহী আদেশে তুলে নিলেন! ২. ৬৬৬ কোটি টাকা সরকারি কর মওকুফ করে দিলেন, ৩. নিজ প্রতিষ্ঠানের আগামী ৫ বছর ট্যাক্স ফ্রী করে দিলেন, ৪. গ্রামীন ব্যাংকের জনগণের অংশ কমিয়ে ২৫% থেকে ১০% করে দিলেন, ৫. ৭০০ কোটি টাকার সামরিক নিরাপত্তা তহবিল নিজ নামে নিয়ে নিলেন, ৬. গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন নিয়ে নিলেন, ৭. রাষ্ট্রের সব জায়গায় নিজস্ব লোকজন নিয়োগ দিলেন, ইত্যাদি —

বাংলাদেশ নামক দেশটার অস্তিত্ব সংকটে ফেলে দিলেন আরকান/ রোহিঙ্গা মানবিক করিডোর দিয়ে! মানবিক করিডোর ইতিহাস জাতিসংঘের নামে যে সব দেশে আছে সবই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক করিডোর! তিনি বাংলাদেশের ভূস্বর্গ সেন্ট মার্টিন ও সাজেস ভ্যালি বাঙালির দখল সত্ব গোলকধাঁধায় ফেলে দিলেন! চিটাগং সমুদ্র বন্দরের দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে তুলে দিলেন! উন্নয়ন শীল দেশে প্রবেশ করতে যাওয়া বাংলাদেশ কে দরিদ্র সীমায় নামিয়ে আনলেন! ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ আমল থেকে বিশ্বব্যাংক জরিপে জিডিপি এখন কম (৩.৩ প্রকাশ)! ২৭ লক্ষ মানুষ হতদরিদ্র হয়ে গেলো গত নয় মাসের ভিতর (অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয়)! সীমান্তে দখল হরালেন সেচ্ছায়!
সবকিছু সেই শেখহাসিনা বেগম খালেদা আমল থেকে শত ভাগ পিছনে! আইনের শাসন, স্বজন প্রীতি, গনতন্ত্র হীনতা, মোটা ভাত মোটা কাপড় আজ কল্পনার বাইরে!

আগের আমল স্বৈরাচার ছিলো, এ আমল তো তুঘলক আমল আখ্যায়িত, একক নিয়ন্ত্রণ, জনগন সাংসদ বিহীন সিদ্ধান্ত!
আশ্চর্যজনক হলো মানুষ মৃত্যু কে ভাবে না, জীবনের শেষদিন ও অর্থলিপ্সু ক্ষমতার মোহ থাকে! যুধিষ্ঠির ঠিকই বলেছিলেন! মৃত্যু মনুষ্য মনে ভীতি আনতে ব্যর্থ হয়েছে তা সে যত মৃত্যু কিনারায় হোক না কেন?

চলবে —