০১- সংকীর্ণচেতা
না-ই বা পারো উৎসাহ দিতে,
তবুও নিরুৎসাহিত করো না।
নতুনকে জানার আগ্রহ, সমৃদ্ধ
নতুন শিশুদের হীনমন্য করো না।
বীর তো সে-ই, যে সত্যকে মানে
ভীরু তো সে-ই, যে অন্ধ হয়ে বাঁচে।
তোমার নিরুৎসাহ মূলক একটি বাণী,
নষ্ট করে দিতে পারে, নতুনের সম্ভাবনা অনেকখানি।
যদিই বা তাদের না-ই বা দাও
অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জানতে,
তবে জাতির হাল ধরবে কে?
প্রতিটি বিষয় বুঝতে দাও তাকে
তবেই সে যোগ্য একজন হবে।
শিশুকে বার্ধক্যের পূর্বে বৃদ্ধ বানিও না,
মানসিকভাবে দুর্বল হবে কাজে আসবে না।
কেন তুমি বলো- ‘তোমার দ্বারা হবে না!’
এডিসনের গল্প কি তুমি মোটেও জানো না?
যেখানে, মহান সৃষ্টিকর্তা তাগিদ দেন
চেষ্টা চালাবার , তুমি বাধা দেবার কে?
ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে মানুষ অসাধ্য সাধন করে।
শিশু কিশোরকে ব্যর্থতার ভয় না দেখিয়ে
দেখাও রাবার্ট ব্রুসের হার না মানা দৃঢ়তা।
বাঙালিরা যে সিংহ পুরুষ ছিলেন
সেটাও বাদ দিও না। সবই জানা ইতিহাস।
যাদের ভয়ে কিং সাইরাস পদ্মা পাড়ি দিতো না,
দিল্লির মুঘল সম্রাটরাও পাত্তা পেতো না।
তবেই নতুন সিংহ আসবে
নিজেদের শিকড় ধরবে,
বিশ্ব শাসন করবে আর মুক্ত হয়ে বাঁচবে।
০২- ফুল
ফুলকে যখন বলি- ‘তুমি দেখতে তো বেশ মিষ্টি,
সজীবতা ধরে রাখতে চাও কি তুমি বৃষ্টি?’
প্রতি উত্তরে পাপড়ি ঝাপটিয়ে সে বলে-
‘এখন যে বসন্ত তা কি তুমি গেলে ভুলে?’
আমি বলি- ‘কিশলয় গুলো
পূর্ণতা পাওয়ার সাথে সাথে জানান দিচ্ছে,
তোমার বসন্ত ভালোই কাটছে।’
সে বলে- ‘বসন্ত শেষে তো আর খবর নাও না,
যা-হোক, কিছু বল যাতে প্রফুল্ল হবে মনটা।’
আমি বলি-
‘তোমার থেকে নেওয়া সুমিষ্ট সুভাসটা,
খানিকটা হলেও পুষিয়ে দেয়
তোমার তরে দেয়া জল আর সময়টা।’
ফুল কখনো পুরনো হয় না
শুষ্কতায় সে আকর্ষণ হারায় না
সময়ের সাথে মায়া আনুপাতিক হারে বাড়ে
ঠিক সাদৃশ্যপূর্ণ একজন বিশ্বস্ত মানুষের তরে।
০৩- সমালোচনা
কিংবদন্তিরা অন্যের সমালোচনা করেন না,
জ্ঞানী জনেরা অন্যের প্রয়োজনহীন
দুর্ভাবনায় পরে থাকেন না।
যদি সত্যিই তারা তা করতেন,
তবে নিজেকে সময় দিতে পারতেন না।
যেখানে তারা বিরামহীন আত্ম সমালোচনায়,
সেখানে অন্যের সমালোচনা করার সময় কই পায়?
যেখানে আত্মত্রুটির সূক্ষাণু সূক্ষটুকু শুধরাতে চায়,
সেখানে তারা অন্যের ত্রুটি খোঁজার অবকাশ কই পায়?
কিংবদন্তীদের কখনো পরনিন্দুক হিসেবে পাবেন না।
বরঞ্চ সফল ব্যক্তিরা সমালোচনা না করার জন্যই আজ কিংবদন্তি।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন তিনির বাণীতে-
খোটা দানকারী —-যাবেন না সেই একই কাজ না করে।
কবিগুরু বলেছেন অনেকটা একই সুরে-
“যাদের করেছ অপমান
অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।”
নিউটন-ও বলেননি এর ব্যতিক্রম
গতির তৃতীয় সূত্রে প্রমাণ করেছেন তিনি এর অনুক্রম।
০৪- স্বদেশের তরে
যদিও বা তুমি যেতে পারো,
যেতে পারিনা আমি।
এ বঙ্গে আমার জনম,
এ বঙ্গেই আমার সবই।
হোক না অজস্র বিপর্যয়,
তবুও এ বঙ্গেই থাকিতে রাজি।
মেঘ যে আমার খুব শখের,
কোথা পাবো রাশিরাশি?
কোথা বা পাব বিরল প্রকৃতি এ বঙ্গের ন্যায়,
কোথা বা পাবো অনুরাগী জন এ বঙ্গের তর?
এখানে না থাকে যদি কোন আশা,
তবে আশা বুনবো আমি।
বস্তুত এ কর্দমাক্ত মাটি,
আষ্টেপৃষ্ঠে রেখেছে মোর সবই।
চাইব না কভু যেতে তার সান্নিধ্যের অন্তরায়,
তবে সৃষ্টিকর্তা যদি না চায়।
০৫- ওয়ান নেশন
ওহে বাঙালি জাতি!
কেমনে তুমি এক ভাই আরেক ভাইরে মারো ছুরি?
জন্ম তোমার একই মাতা, একই পিতা হতে
আক্রোশ কেন এত পরিমাণ এলো কোথা থেকে?
যেখানে মানবতা বলে সৃষ্টির সেবা করতে,
ভাই হয়ে ভাইরে তুমি মারতে পারলে কেমনে?
যেখানে ভাইয়ের খারাপ সময়ে পাশে থাকার কথা,
সেখানে কামনা কর- পাক সে খারাপ দিনের দেখা!
তোমার কি হাত কাঁপেনা তুলতে ভাইয়ের গায়ে হাত?
ভাতৃত্বের বন্ধন ছিন্ন করতে বুকে লাগেনা ঘাত?
কেমন করে তুমি হাত ভাঙো, করার জন্য ভিন্ন দল,
এই হাত দিয়েই গড়েছিলে একতা ভুলে কি গেলে সব?
এ জাতি তো বিরাট সাহসী,
প্রতিটি পাতা-ই তার একেকটা কাব্য গীতি।
এ জাতি তো অস্তিত্বের লড়াই-এ সবটুকু দিতে জানে,
দেশ রক্ষায় কাঁধে কাঁধ রেখে মানব প্রাচীর গড়ে।
০৬- আমার মা
আমার মা,
অনন্য বিচিত্রে গড়া অনন্যা।
অন্যদের মাকে দেখি কত ছাড় দেন,
আমার মা কেন তেমন হন না?
কেন তিনি বলতেন-
“কেউ তোমায় ভৎসনা করলে, তুমি করো না।
কেউ তোমায় আঘাত করলেও, প্রতিঘাত করো না।”
স্যার-কেই বা কেন তিনি বলতেন-
“তার শরীরের মাংস যত আছে, সব আপনার
হাড্ডিগুলো বাকি থাকলে ফেরত দিয়েন আমায়।”
আমার মা বড়ই অভিমানী,
সামান্য ভুলেও কষ্ট পেতেন অনেকখানি।
কেনই বা তিনি বলতেন,
তার সঙ্গে মন্দ আচরণ করাীকেও শ্রদ্ধা করতে?
কেন তিনি বলতেন, প্রতি কথাতে সচেতনি হতে?
আমার মা বড়ই শাসন করতেন, খুব জেদেনি
রাগের দিক দিয়ে কখনো আমায় জিততে দেননি।
সবই না হয় মেনে নিলাম ;তবে কেনো তিনি বলতেন, হাঁটার সময়ও মাটিতে তাকানোর কথা?
আমার মা, বড়ই সৎ বিচারপতি
তার বিচারে আমার কোনো সুবিধা পাওয়া হয় না।
মা বলতেন- যখন তোমার রাগ হয়, ভেবো আমার কথা,
বলোনা এমন কিছু যাতে অন্য কেউ পায় ব্যাথা।
উপরোক্ত সবই ছিলো শৈশবের জল্পনা,
এখন আমি বড় হয়েছি;
প্রতিটি কথারই অর্থ বুঝি।
আমার প্রতি মায়ের ছিলো অগাধ ভালোবাসা,
তাই তো চাইতেন না, আমার দ্বারা অন্য কেউ পাক সামান্য ব্যাথা।
মাটিতে না তাঁকিয়ে হাটলে যে,
জীবনযুদ্ধে হোচঁট খেয়ে পিছিয়ে যেতে পারি
এও আমি উপলব্ধি করি।
রবের কাছে প্রার্থনা,
মা যেন ভালো থাকেন সর্বদা
তারই পদতলে পাই যেন নিজের স্বর্গখানা।
০৭- লেবাস
লেবাসের অন্তরালে দূর্জন-ও ঢাকা পড়ে
মানব জাতি বড়ই বোকা,
বড়ই চালাক, বড়ই সুবিধাবাদী
ভালো লেবাসই যারা বলে মাপি।
সুন্দর লেবাসই যে সুন্দর মানুষ গড়ে এমন বিষয় না,
অনেক সুন্দর মানুষ আছেন যাদের লেবাসই থাকে না।
কী লাভ বলো দামি লেবাস পড়ে,
যদিই বা তুমি তুচ্ছ করো লেবাসহীন মানুষেরে।
মূল্যবান লেবাস-ও মূল্যহীন ঠেকে,
যদি পরিহিত ব্যাক্তির মূল্যবোধ-ই না থাকে।